শিশুর শরীরকে সুস্থ ও রোগমুক্ত রাখতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর খাবার রাখা উচিত। এই পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে প্রচুর মৌসুমী শাক সবজি ও ফলমূলের জুড়ি নেই। ফলমূলে থাকে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান যা শরীরের ইলেকট্রলাইট ব্যালেন্স করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, মনোযোগ বৃদ্ধি করে, দাঁত ভালো রাখে, শরীরে শক্তি যোগায়। কিন্তু দেখা যায়, বাহির থেকে আসার পর শিশুরা ফাস্টফুড বা অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবারের প্রতি আগ্রহ দেখায়, যা শরীরের জন্যও যেমন ক্ষতিকর তেমন শিশুদের অলস করে তোলে। পাশাপাশি বিভিন্ন রঙের সবজি দিয়ে খাবার রান্না করে সাজিয়ে পরিবেশন করলে শিশুদের খাওয়ার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে এবং সঙ্গে প্রয়োজনীয় পুষ্টিও পূরণ হবে।
শিশুস্বাস্থ্য
অতিসারঃ এটি একটি পেটের অসুখ, যা ইনফেকশন, হজমের সমস্যা বা বেশি করে ফলের রস খাবার জন্য হতে পারে। আপনার বাচ্চার যদি এই অসুখ হয়, তাহলে তাকে ঘরে রাখুন ও বেশি করে জল খাওয়ান। যদি ২৪ ঘন্টার মধ্যে না কমে, ও তার সঙ্গে জ্বর, পেট ব্যাথা, কালো বা রক্তাক্ত পায়খানা, বা বমি হয়, তাহলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান।
জ্বরঃ শরীরের তাপমাত্রা কোনো কারণে বেড়ে যাওয়াটাকে জ্বর বলা হয়।জ্বর অনেক কারণে হতে পারে। সাধারণত জ্বর নিয়ে খুব একটা চিন্তা করার কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু, এটি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে, যদি
১. আপনার ৩ মাসের থেকে ছোটো শিশুর রেকটাল তাপমাত্রা ১০০.৪ᵒF ছাড়িয়ে যায়
২. আপনার ৬ মাসের ছোটো শিশুর তাপমাত্রা ১০১ᵒF ছাড়িয়ে যায়।
৩. আপনার সন্তানের কান্না কাটি থামানো যাচ্ছে না।
তাপমাত্রা কমানোর জন্য অল্প ঠান্ডা পানিতে কাপড় ভিজিয়ে সেটা বাচ্চার কপালে ঠেকিয়ে রাখতে পারেন। জ্বরের সঙ্গে কাশি, বমি বা আমাশা হলে সেটা চিন্তার ব্যাপার হয়ে দাঁড়াতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্যঃ কোষ্ঠকাঠিন্য হলে আপনার সন্তানের পায়খানা শক্ত ও পায়খানা করতে কষ্ট হয়। এটা পানি ও ফাইবার(আঁশযুক্ত খাবার) কম খাওয়ার জন্য হতে পারে। খাবার পর আপনার বাচ্চাকে ১ গ্লাস পানি খাওয়ান। যদি এই সমস্যাটি না কমে, বা আপনার বাচ্চার পেট ফুলে ওঠে আর বমি হয়, তাহলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান।
ঘাঃ বাচ্চার শরীরে ঘা অনেক কারণে হতে পারে। ডাইপারের জন্য যাতে ঘা না হয়, তার জন্য সময়মত বাচ্চার ডাইপার পাল্টানো উচিত। তা ছাড়া ময়শ্চারাইজিং ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। একজিমা হলে রুক্ষ সাবান ব্যবহার করা বন্ধ করুন আর বাচ্চার ত্বকে ময়শ্চারাইজিং ক্রিম লাগানা।
কাশিঃ বাচ্চার জ্বর হলে, তার থেকে হালকা কাশি হতে পারে। ফ্লু থেকেও কাশি হতে পারে। কাশি হলে আপনার বাচ্চাকে আদা রসুন দিয়ে উষ্ণ গরম পানি খেতে দিন। ৪ বছরের থেকে বড়ো বাচ্চাদের গরম পানিতে এক চামচ মধু দিয়ে খাওয়াতে পারেন। চার বছরের থেকে ছোট বাচ্চাদের সর্দি কাশির ওষুধ দেওয়া উচিত নয়। ছোট বাচ্চাদের জন্য এই ওষুধ গুলি কাজ করে না এবং অনেক সাইড এফেক্টস দেখা দেয়।
পেট ব্যাথাঃ পেট ব্যাথাবাচ্চাদের মধ্যে একটি খুবই সাধারণ সমস্যা। এটা শূলবেদনা, রিফ্লাক্স, নির্দিষ্ট খাবারের সঙ্গে ঝামেলা, ইনফেকশনের জন্য ঘটতে পারে। একটু নতুন ধরণের খাবার খেলে এটা হতে পারে। বেশিরভাগ পেট ব্যাথা এমন কোনো চিন্তার ব্যাপার না।
দাঁতব্যথাঃ আপনার বাচ্চার ৬ মাস বয়স থেকে দাঁত গজাতে থাকবে। মাড়ি থেকে যখন দাঁত ফুঁড়ে ওঠে, তখন বাচ্চার খুব ব্যাথা হতে পারে। আপনি আপনার বাচ্চাকে কোনো রাবারের তৈরী Teething রিং চেবানোর জন্য দিতে পারেন। আপনি আপনার আঙ্গুল দিয়ে বাচ্চার মাড়ি হালকা করে মালিশ করে দিতে পারেন
গ্যাস্ট্রিকঃ আপনার বাচ্চার পেটে গ্যাস জমাটা খুব সাধারণ। আপনি আপনার বাচ্চাকে আস্তে আস্তে খাওয়ান। খাবার পর আস্তে আস্তে পিঠে হাত দিয়ে চাপড়ান যতক্ষণ না বাচ্চার ঢেকুর উঠছে। খাবার মাঝখানেও ঢেকুর তোলাতে পারেন। যদি ফর্মুলা ব্যবহার করেন, তাহলে বেশি ঝাঁকাবেন না। এতে গ্যাস বাবেলস জমে যেতে পারে।
বন্ধ নাকঃ ৪ বছরের নিচের বাচ্চাদের সর্দির জন্য ওষুধ দেওয়া উচিত না। নাক পরিষ্কার করার জন্য নুন জলের ফোটা ব্যবহার করতে পারেন। আপনি আপনার বাচ্চাকে উষ্ণ গরম পানিতে গোসল করাতে পারেন।
বমিঃ বাচ্চাদের অনেক সময় বমি হতে পারে। এর জন্য কোনো চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। বাচ্চাদের বেশি করে পানি খাওয়ান।
ডায়রিয়াঃ আপনার বাচ্চার পায়খানা হঠাৎ নরম হওয়া মানেই কিন্তু ডায়রিয়া নয়, তা নিয়ে চিন্তিত হওয়ারও তেমন কিছু নেই। তবে এই পরিবর্তন যদি এমন হয়, যে আপনার বাচ্চা স্বাভাবিক সময়ে তুলনায় বেশি বা বারবার পায়খানা করছে এবং তা প্রতিবারই একেবারে তরল পানির মতো হয়, তবে সম্ভবত এটা ডায়রিয়া। এছাড়াও জ্বরের সাথে বাচ্চার অতিরিক্ত কান্নাকাটি, শরীরে র্যাশ এসব ডায়রিয়ার লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
কানের ইনফেকশনঃ বাচ্চাদের শারীরিক সমস্যা বা রোগের মধ্যে কানের ইনফেকশন অন্যতম একটি ভয়াবহ সমস্যা। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হল শিশুদের কানের সমস্যা অন্যান্য সাধারণ রোগের থেকে কম হয়ে থাকে বলে আমরা বাবা মায়েরা এটিতে খুব একটা নজর দেইনা আর এটাকে নিতান্তই মামুলী ব্যাপার বলে গুরুত্ব কম দিয়ে থাকি। আপনি জানেন কি কানের ইনফেকশন আপনার বাচ্চার জন্য মোটেও সাধারণ কোন ব্যাপার নয়। কানের ইনফেকশন থেকে আপনার বাচ্চা সারা জীবনের মতো বধির হয়ে যেতে পারে।
দাউদঃ দাউদ হয় একটা ফাঙ্গাসের জন্য, যেটা মৃত্ চামড়া, চুল এবং নখ থেকে পুষ্টি গ্রহণ করে। এই রোগটি একটা লাল, খসখসে ছোঁপ রূপে প্রথমে দেখা দেয়। তার পরেই দেখা যায় সেই বিখ্যাত লাল রিং, যার থেকে এই রোগটার নামকরণ করা হয়েছে।
চিকেন পক্সঃ এই রোগটি আজকাল খুব একটা দেখা যায় না ভ্যাকসিনেশনের জন্য। এই রোগটি খুবই ছোয়াচে। চিকেন পক্স হলে সারা গায়ে লাল লাল ফোস্কা হয় এবং তাতে খুব চুলকানির সমস্যা দেখা দেয়। এই ফোস্কাগুলো সময়ের সাথে ফেটে যায়, তারপর আস্তে আস্তে শুকিয়ে গিয়ে খসে পরে।
ইমপেটিগোঃ ইমপেটিগো হয় ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশেনর জন্য। এই রোগের জন্য সারা শরীরে লাল লাল ফোস্কা পরে। ফোস্কাগুলি সাধারণত মুখ ও নাকের আশপাশে দেখা দেয়। এই ফোস্কাগুলি ফেটে গেলে হলুদ-খয়েরি রঙের ছাল পরে থাকে। এটি একটি ছোয়াচে রোগ। অসুস্থ বাচ্চাদের তোয়ালে বা খেলনা থেকে এই রোগ আপনার বাচ্চার হতে পারে। বেশি চুলকালে এটি সারা গায়ে ছড়িয়ে যেতে পারে
ঘামাচিঃ গরমকালে ধুলো ময়লা বা বেশি ঘাম হবার জন্য আমাদের শরীরের ঘাম নালী গুলো আটকে যেতে পারে। এই কারণে ঘামাচি হয়। হাত, পিঠ, ঘর বা কাঁধে দেখা দিয়ে লাল রঙের ছোটো ছোটো ফুসকুড়ি। গরম কালে আপনার বাচ্চাকে বেশি মোটা জামা কাপড় পড়াবেন না। তার থেকেই ঘাম নালী গুলি বন্ধ হয়ে যায়। বাচ্চাদের হালকা রঙের পাতলা কটন জামা পোড়ালে ভালো হয়।
একজিমাঃ যাদের একটু সেনসিটিভ ইমিউন সিস্টেম আছে, তাদের এই রোগটি হতে পারে. পুরু ঘা, শুকনো ত্বক ও তীব্র চুলকানি হলো এই রজার চিহ্ন। এটি বড়ো হবার সঙ্গে সঙ্গে সেরে যায়।
হামের লালচে ফুসকুড়ি বা ছোপঃ এই হালকা রোগ ৬ মাস থেকে ২ বছরের বাচ্চাদের হয়। প্রথমে বাচ্চার ঠান্ডা লাগে, যার সাথে সাথে কয়েকদিন ধরে জ্বর হয়। এই জ্বর হঠাৎ সেরে যায়। তারপর বুক, হাত ও পায়ে ঘা দেখা দেয়।